কাশিমপুর থেকে বনানীর বাসায় ফেরার পথেই আইনজীবীর মাধ্যমে তিন দফা পরীমনির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বিনোদন বিভাগ। তিনি জানান, ওই মুহূর্তে কথা বলা সম্ভব নয়। বাসায় ফিরে বিশ্রাম নেওয়ার পর কথা বলা যাবে। বিকেলে তাঁর কাছ থেকে এই কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা জানা গেল।
আমার অনুভূতি হারিয়ে গেছে। এত দিন আমার স্বাভাবিক জীবন তো ছিল না। অন্য রকম একটা জীবন। তবে অনেক কিছু শিখেছি।ফিরেই নাকি বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পেয়েছেন?
কারাগার থেকে ঘরে ঢোকার পর বাসা ছাড়ার নোটিশ দেখতে পেলাম। এখন কি তাহলে আমার বসবাসের অধিকারটা পর্যন্ত কেড়ে নিচ্ছে ওরা? ওরা যা চেয়েছিল, তা-ই কি হচ্ছে? আমি কি তাহলে ঢাকা ছেড়ে চলে যাব, নাকি দেশ ছেড়ে চলে যাব? এখন এই মুহূর্তে আমাকে কে বাসা খুঁজে দেবে? চার দিন আগে এই বাসা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি তো একা থাকি না। আমার বয়স্ক নানুভাই আছেন। হঠাৎ করে এসব কী!
হঠাৎ করে কোথায় যাব, সেটা কি কেউ বলতে পারেন?
হুট করে আমি কোথায় যাব? বাড়িওয়ালা নোটিশ দিয়েছেন। বাসাটা তো আমার বাপের সম্পত্তি না। সবাই আমার বাসার নিচে এভাবে ক্যামেরা তাক করে রাখবে, মোবাইল হাতে নিয়ে সারাক্ষণ বাসার নিচে বসে থাকবে! আরে বাবা, এই বাড়িতে তো আরও পাঁচ-ছয়টা পরিবার থাকে। তারা তো ডিস্টার্ব ফিল করে। আমি হলেও তো তেমনটা করতাম। সারাক্ষণ এসব সহ্য করা যায়? কতক্ষণ র্যাব, কতক্ষণ ডিবি, কতক্ষণ পুলিশ, কতক্ষণ সাংবাদিক—এসবে তো আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। এসবে তো আমি ইউজড টু না। আমি তো এমন কিছু করি নাই, ভাই। কাউকে মার্ডার তো করি নাই। আমি তো পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আসলে এমন কিছুই করি নাই যে সারাক্ষণ আমার বাসার সামনে সবাইকে ক্যামেরা তাক করে রাখতে হবে। আমাকে চাইলেই পাওয়া যায়। ডাকলেই আমি যাব।
সবাইকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে মন চাইছে। এটা তো আর বাস্তবে সম্ভব না। মন থেকে ভালোবাসা জানানো ছাড়া আর কীই–বা আছে। আমি সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি সত্যিই তাঁদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছি। আমি তাঁদেরই হয়ে গেছি। আমি যেমনই হই, পচা হই, বোকা হই, চঞ্চল হই, শান্ত হই—আমি তো তাঁদেরই পরী। তাঁরা এটা জানেন এবং আমাকে সেভাবেই গ্রহণ করেছেন।
আপনার ডান হাতের তালুতে মেহেদি দিয়ে লেখা ছিল ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’। এই কথা দিয়ে আসলে কী বলতে চাইছেন?লেখাটা পড়ে যাঁদের মনে হবে, আল্লাহ, আমাকে নিয়ে এটা লিখল—তাঁদের উদ্দেশেই এই লেখা। তাঁদের তালিকা তো আমি নাম ধরে বলতে পারব না। আমাকে আটক, গ্রেপ্তার এবং কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের জীবন সার্থক মনে হয়েছে। কেউ কেউ তো খুশিতে নাচাও শুরু করেছেন। যেই আমি ফিরে এসেছি, অনেকে আবার মিস ইউ, লাভ ইউ বলা শুরু করেছেন।
এই ধরনের ভালোবাসা আমার দরকার নাই। আমি তাদেরকেই বলেছি, তোমরা আমাকে ভালোবাইসো না। আমি যাঁদের জন্য পরীমনি, যাঁরা সত্যি সত্যি আমাকে অন্তরের মধ্যে বসাইয়ে রাখছেন, তাঁদের আমি সব সময় ভালোবাসি। আজীবন ভালোবাসি। আমি এই কয়েক দিনে রিয়েলাইজ করলাম, কাউকে যদি শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি—তাঁদেরকে কখনোই সেই অবস্থান থেকে সরানো মুশকিল। আমার ওপর হুজুগে একটা সিল মেরে দেবেন আর সাথে সাথে শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা বোকামি। স্রেফ বোকামি। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা এত ঠুনকো না। সে সত্যি সত্যি ভালোবাসে, যে সত্যি ভালোবাসা পেয়েছে।
সবার মনে একটা প্রশ্ন, পরীমনির হাতের ওই লেখা কে লেখল? পরীমনি মেহেদি পেল কই?
এটা আমিই লিখেছি। আজ অনেক সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেছি। সারা রাত এমনিতেও ঘুমাইনি। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যখন গেটের ওখানে এসে বসলাম, জানলাম আমার খালু আসছে। তার আসায় দেরি হচ্ছিল। বসে থাকতে থাকতে একটা বাচ্চা আসে। তার কাছেই মেহেদি ছিল। তার থেকে নিয়েছি। বাম হাত দিয়ে ডান হাতে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ লিখেছি। কারাগারে মেহেদি আছে কি না, আমি জানিও না।
আমি ভাঙতে চাই না। আমাকে নানাভাবে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, হবেও আমি জানি। আমি এক দিনে তো পরীমনি হইনি। আমি কেমনে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি, আমি জানি। কেউ কিছু বলে দেবে, তা নিয়ে মন খারাপ করে দমে যাব, সেটা কখনোই হবে না। তাহলে প্রতিবছর তো ১০টা–২০টা পরীমনি বের হইত সারা বাংলাদেশে।
আর কী দেবে। চোখের সামনে দিয়ে এত বড় হুমকি গেল, আবার জিগ্যেস কেন করছেন? এরপর আর কোনো হুমকির দরকার?আমার তো মনে হচ্ছিল, একটা ঘুম দিব। ঘুম থেকে উঠেই কাজে যাব। পুরোটাই তো দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, একটা স্বপ্ন দেখছিলাম, স্বপ্নের ডিউরেশনটা একটু লং। ২৭ দিন হয়ে গেছে, টেরই পাই নাই। ২৭ দিন ঘুমে ছিলাম, এটাকে দুঃস্বপ্ন মনে করতেছি।